ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা আশা করছেন, সব দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এই ভোট।

আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোটের দিন রেখে রোববার নির্বাচন ভবনে দুই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি। কমিশনে বিরোধের মধ্যে সহকর্মীদের পাশে রেখেই এই তফসিল দেন তিনি।

অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন হলেও গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দলই এসেছিল। তবে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করেছিল বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো।

বিএনপির অভিযোগের তীর ছিল নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও, তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে উপনির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে নূরুল হুদা বলেন, ঢাকায় স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে বলেই তিনি আশাবাদী।

ভোট নিরপেক্ষ হবে; সবাই যেন নির্বাচনে আসেন। নির্বাচন সকলের জন্য উন্মুক্ত। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে। সবাইকে আসার জন্য বলছি। আশা করি উৎসবমুখর, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে।”

সিইসি নিরপেক্ষ আচরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রতিটি নির্বাচনে তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে আসছে বিএনপি; যদিও তার মধ্যেই বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিয়ে আসছে দলটি।

প্রশ্ন রেখেই চট্টগ্রাম-৮ আসনে উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছিলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলব, এই নির্বাচন অন্তত যদি তারা সুষ্ঠুভাবে করতে পারে, তাহলে জনগণের কিছুটা আস্থা নির্বাচন ব্যবস্থার উপর ফিরে আসতে পারে।

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল মাত্র হয়েছে বলে এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও জানা যায়নি।

বিএনপির বর্জনের মধ্যে এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তরের মেয়র উপনির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ছিল ভোটারদের খরা।

এবার দলগুলোর পাশাপাশি ভোটারদেরও কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানান সিইসি নূরুল হুদা।

“আপনারা নির্বিঘ্নে ভোট দেবেন। আপনাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমরা নেব। আমরা আহ্বান করি, আপনারা ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেন।”

এবার সম্পূর্ণ ভোট ইভিএমে হওয়ায় তাও কেন্দ্রে যেতে ভোটারদের উৎসাহিত করবে বলে মনে করেন তিনি।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলায় সেনা সদস্য না থাকলেও ইভিএম পরিচালনায় দুজন করে সেনা কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন।

সিইসি বলেন, “ভোটের আইন শৃঙ্খলারক্ষায় সেনাবাহিনী থাকছে না। আইন শৃঙ্খলায় থাকবে পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তবে ভোটকেন্দ্রে ইভিএম এর কারিগরি দিক সামলানোর জন্য তারা থাকবেন।

আইনি জটিলতা নেই

সম্প্রসারিত ৩৬টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা ভোট আটকাতে আদালতের শরণাপন্ন হলেও জটিলতার কোনো শঙ্কা করছেন না সিইসি।

তিনি জানান, ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিন আগে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকে। মেয়র বা কাউন্সিলর কখন নির্বাচিত হলেন, সেটা মুখ্য বিষয় না। … সিটি করপোরেশনের মেয়াদ কত দিন সেটা নির্ধারিত রয়েছে আইনে।

“নির্বাচন আটকে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

৩৩% নারী

২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো সব স্তরের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব ৩৩ শতাংশ রাখতে ব্যর্থ হলে আইন সংশোধনের বিষয়ে আভাস দিয়েছেন সিইসি নূরুল হুদা।

আইন সংশোধনের বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এখনও সময় হয়নি; কোনো দল নির্ধারিত সময়ে পূরণে ব্যর্থ হলে তখন বিবেচনা করব।

২০২১ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছে বলে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সিইসিকে জানানো হয়।

জবাবে সিইসি বলেন, “দল কী করছে না করছে, তা তাদের বিষয়। আমাদের আরপিওতে ২০২০ সালের কথা বলা রয়েছে। আমাদের কাছে বিষয়টি (২০২১ সালে) আইনসিদ্ধ নয়। ২০২০ সালের মধ্যে ব্যর্থ হলে তখন বিষয়টি দেখব।